Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনবিভাগ - অণুগল্পশিরোনাম  - আশ্রয়ণীর অধিকারশব্দসংখ্যা - ৪১৫তারিখ__/ ০৭.০৩.২০২৪
           বয়স কত আর হবে ! দু'জনেই কো'এড স্কুলে পড়ে। আশ্রয়ণী আচার্য তখন ক্লাস সিক্সে আর অধিকার মজুমদার ক্লাস এইটে। পারস্পরিক আ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

বিভাগ - অণুগল্প

শিরোনাম  - আশ্রয়ণীর অধিকার

শব্দসংখ্যা - ৪১৫

তারিখ__/ ০৭.০৩.২০২৪


           বয়স কত আর হবে ! দু'জনেই কো'এড স্কুলে পড়ে। আশ্রয়ণী আচার্য তখন ক্লাস সিক্সে আর অধিকার মজুমদার ক্লাস এইটে। পারস্পরিক আকর্ষণ, দেখা করা - কথা বলার জন্য ছোটাছুটি, খুনসুটি.... সেই বয়সে তখনও কেউ ঠিকমতো জানতো না - বুঝতো না ভালোবাসা কারে কয় ! 


          পরবর্তী সময়ে অধিকার বুঝেছে - মেনেছে আশ্রয়ণীই তার জীবনের প্রথম প্রেম। তারপর সময়ের জল অনেকদূর গড়িয়েছে, অনেক বসন্ত পেরিয়েছে। অধিকার মাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে কোলকাতায় চলে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। সেই শেষ দেখা আশ্রয়ণীর সাথে। সময়ে - অসময়ে বারবার আশ্রয়ণীর 'বালিকা-মুখ' অধিকারের অন্তর্দৃষ্টিতে ধরা দেয়। মাধ্যমিক পাশ করার পর আশ্রয়ণী ওর মামার বাড়ি টাটানগর চলে যাওয়ার খবর পেয়েছিল। হয়তো সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়েছে। এখন বছর পঁচিশের যুবতী হবে। না জানি কেমন দেখতে হয়েছে এখন !  সামনাসামনি হলে অধিকার তারে চিনতে পারবে কি ! আশ্রয়ণীও অধিকারকে মনে রেখেছে কি ! এতদিনে আশ্রয়ণী বিয়ে করে হয়তো জমিয়ে সংসার করছে !


         অধিকারের জীবনে বেশ কয়েকটা ভালোবাসার প্রস্তাবও এসেছিল পরিচিত মহলের অলিগলি থেকে। খুচরো প্রেমের ইচ্ছেটুকুও মনে জাগেনি। সবিনয়ে - সযত্নে এড়িয়ে গেছে। বেশিরভাগ বন্ধুবান্ধবদের বিয়ে-থা হয়েও গেছে। নিজে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তথ্য আধিকারিক পদে কর্মরত। সাহিত্যপ্রেমী অধিকার নিজেও লেখালেখি করে। কোলকাতার বিভিন্ন সাহিত্যানুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে হয়। আজ 'হারানো সুরের সন্ধানে' সাহিত্য পরিবারের 'কবি মিলন' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির অধিকার মজুমদার।


" তোমায় হারিয়ে, স্মৃতিপথের ঘন্টা নাড়িয়ে

     আমি যে আজও তোমার অপেক্ষায়।

আশ্রয়ণীর আশ্রয়ে বাঁধার ইচ্ছে আমার ঘর,

    আর কতকাল রব তোমার প্রতীক্ষায় ! ....... "


         প্রবল করতালির হলঘর গমগম করে উঠলো।  প্রত্যেক সাহিত্যানুষ্ঠানে অধিকার তার স্ব-কন্ঠে, প্রেমিকা আশ্রয়ণীকে নিয়ে স্ব-রচিত কবিতাপাঠ করে পাঠকমহলে এক সম্মানীয় ও পরিচিত মুখ। কিন্তু অধিকার এই কবিতাটাই বারাবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঠ করে এই আশায় যদি কোনোদিন - কোনোভাবে আশ্রয়ণী শুনতে পারে - বুঝতে পারে ! আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।


         অনুষ্ঠানে পরপর বেশ কিছু ভালো ভালো কবিতাপাঠ শোনা গেল। ঘোষক এবার 'পথহারা প্রিয়া' ছদ্মনামের এক নামকরা কবিকে ডেকে নিতেই এক পরমাসুন্দরী  ডায়াসে এসে দাঁড়াল। এই ছদ্মনামের কবির নাম আগেও শুনেছে। আগে দেখেনি কখনও, যদিও ভালো লেখিকা হিসেবে ইতিমধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছে।


সুরেলা গলায় 'পথহার প্রিয়া' শুরু করল :


   " চলে গেলে তুমি, আর ফিরলে কই ! 

     অধিকার হারিয়ে কেমনে আমি রই !

     তোমার আশ্রয়ণী আজও আশ্রমিণী,

     তোমায় ভুলে যাব এমনটা আমি নই। ...... "


     প্রথম দু'চরণেই প্রবল করতালি। অধিকার চমকে ওঠে। চোখ বিস্ফোরিত। একি! 'পথহারা প্রিয়া'ই তো আশ্রয়ণী! চেহারায় চিনতে পারেনি। কবিতার শব্দচয়ন দু'জন দু'জনকে চিনিয়ে দিয়েছে। পরস্পরের দৃষ্টিতে প্রেম-সুধার বর্ষণ। 


     অধিকার অবচেতন মনে এগিয়ে আসতেই কবিতাপাঠ থামিয়ে আশ্রয়ণী স্পিকার হাতেই অধিকারকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে। ঘটনার চমকে শ্রোতাদর্শকও চুপ।


      আশ্রয়ণী বলেই ফেললো," এই আসরে এইমাত্র আমার প্রিয়তমকে খুঁজে পেলাম "। এখন থেকে আমার ছদ্মনাম 'পথহারা প্রিয়া' আর থাকলো না। এই মানুষটাই তো আশ্রয়ণীর অধিকার। আপনাদের আশীর্বাদ চাই।"


      বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর প্রবল করতালিতে হলঘর ফেটে পড়ল।


___/ বুদ্ধুরাম