********************* প্রতিজ্ঞা """""""""""""""""""" ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ ২৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ০৮.৬.২০২৪*******…
*********************
প্রতিজ্ঞা
""""""""""""""""""""
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
২৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১
০৮.৬.২০২৪
*********************
ধারের রেস্তই সম্বল!
তবুও পেরিয়ে অনেক চড়াই উৎরাই
তরুণ আমি,
বন্ধুদের বাড়ানো হাত ধরে
অবশেষে জীবনে প্রথমবার
দাঁড়াই এইখানে,
এই তো সেই দার্জিলিং মল!
সরিয়ে কুয়াশার ওড়না
আমার প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘা
বলেছিল কানে কানে,
" এতদিন কোথায় ছিলে?"
আমার হাঁটু কেঁপেছিল
তিতিরের গ্রীবার মতো;
বহু আয়াসে নিজেকে সামলে,
নিজের অচেনা স্বরে
করেছিলাম উচ্চারণ,
"আজ থেকে আমি তোমারই হলাম"!
কোথা থেকে কিছু
দুষ্টু মেঘ এসে
শুরু করে ঝিরিঝিরি পুষ্পবৃষ্টি;
লোকের ধারণা এমন সময়ে অসময়ে
বৃষ্টির খুনসুটি:
দার্জিলিং- এর দখলেই
তার বিখ্যাত পেটেন্টসৃষ্টি।
তখন আমার বাইশ কি তেইশ, পরিচয় কাঠবেকার!
সমতলে অদেখা
পাহাড়ি বিভঙ্গ দেখার রোমাঞ্চে
বুকপকেট যায় নিমেষে উপচে!
মনে মনে গেঁথে ফেলি
সিমেন্টীয় প্রতিজ্ঞা:
নামব না আর কখনো নীচে,
এখানেই ধরব হাত মেঘকন্যার,
এই মেঘলোকেই পাতব
বাকি জীবনের সংসার!
তারও অনেক আগে
আমার পায়ে হাঁটা প্রথম শবযাত্রায়
গিয়ে দেখেছিলাম
পৃথিবীর শেষ স্টেশন!
দেখেছিলাম চেলাকাঠের বানানো স্টেজে
লেলিহান আগুনের উদ্দাম নাচ!
কিশোরের দুটি অবাক চোখ
দেখেছিল সেদিন
একটা সম্ভ্রান্ত সামাজিক মানুষ
শরীরে একটিও সুতো না রেখে
কখন যে চলে গেল
ধোঁয়ার আড়ালে,
অগ্নিশিখার অশ্লীল নৃত্যের তালে তালে;
ঠিক বোঝা গেল না!
কিশোর কি শুনেছিল
সেই অগ্নিকন্যার গোপন আহ্বান?
"এই তো নশ্বর মানুষের পরিণাম!
কি হবে ফিরে উলটো পায়ে?
একদিন আবার তো আসতেই হবে
এই ঘোলাজলের নিম্নবর্গীয় খালধারে
জীবনের এই শেষ স্টেশনে!
দিয়েছিল কী বেশরম হাতছানি
সহমরণের?
আরো বহু বহু দিন পরে বুঝেছি
এ সবই নিজেকে ভোলানো
কথার কথা!
এ সবই অর্বাচীন দুর্বলতা!
মেঘলোক থেকে বহিরাগতদের নির্বাসন অবধারিত;
দিনগত সমতলী কুকুরকুণ্ডলী
অপযাপনে
আমার বাকি জীবন যথারীতি সমর্পিত;
তাই নীচে
আরো নীচে নেমে যাই
কোনো দিব্যিই
পারে না ফেরাতে
অমোঘ অবনমন;
আর শ্মশানের বৈরাগী মন
চিতার বুকেই করে ছাই
ফিরতি পায়ে ঠিকঠাক ফিরে যাই
তেলচিটে পুরোনো ঠিকানায়...
জীবনের মানেই হলো
শুধুই একটার পর একটা প্রতিজ্ঞার লাশ
ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে যাওয়া!