বিপর্যয়/ অমৃত মাইতি বিপর্যয় সবার জীবনে আসে না। হিসেবী মানুষদের বিপর্যয় আসে না। কারণ তারা পা টিপে টিপে চলে। নিজের জন্য ভাবনা চিন্তা করে। নিজের পকেটটা সামলে রাখে। কোন ভিখিরিকে দিতে গেলে পকেটে হাত দিয়ে দেখে সবচেয়ে ছোট কয়েনটা ক…
বিপর্যয়/ অমৃত মাইতি
বিপর্যয় সবার জীবনে আসে না। হিসেবী মানুষদের বিপর্যয় আসে না। কারণ তারা পা টিপে টিপে চলে। নিজের জন্য ভাবনা চিন্তা করে। নিজের পকেটটা সামলে রাখে। কোন ভিখিরিকে দিতে গেলে পকেটে হাত দিয়ে দেখে সবচেয়ে ছোট কয়েনটা কোনটা। তাকে কোনদিন সমস্যায় পড়তে হবে না। কিন্তু যে মানুষটি পকেটে হাত দিয়ে যতগুলো কয়েন পায় মুঠো ভর্তি করে ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে তুলে দেয বিপদে পড়লে তাকেই পড়তে হয়। কারণ তার উদারতা তাকে হিসেবী হতে শেখায় না। একজন উদার মনের মানুষ পরোপকারী হওয়াটাই তার জীবনের লক্ষ্য। তিনি অবাস্তব না হলেও অন্যের প্রয়োজনের দিকে তাকানোই তার স্বভাব ধর্ম। এটাই তার স্বাভাবিক এবং সাবলীল জীবন যাপন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি মধ্যবিত্ত মানুষদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।
মধ্যবিত্ত মানুষরা সামাজিক সমাজসেবী পরোপকারী। বড়লোকের স্বভাব চরিত্র আত্মকেন্দ্রিক। তারা মুঠো করতে জানে ভালো। মুঠো আলগা করতে পারেনা হৃদয়ের প্রসারতা নেই বলে। তারা সমাজ থেকে সবকিছুই নেয়। দিতে পারেনা । তাদের কার্পণ্য এবং আত্মকেন্দ্রিকতা তাদের মনকে প্রসারিত করতে দেয় না। তাই তারা বড় কিছু করতে পারেনা সমাজের বুকে।আবার প্রান্তিক মানুষের মধ্যে উদারতা সাধারণত দেখা যায় না কারণ তাদের অভাবজনিত কারণ। তাদের অর্থনৈতিক সংকটের ভয়। পরোপকারের জন্য সময় নষ্ট করলে খাদ্যের অভাব ঘটে তাদের। তাই নিম্নবিত্ত নৈতিক সমর্থন করলেও হাত টান তাদেরকে এগোতে দেয় না।
যুগ যুগ ধরে সমাজ সেবামূলক কাজ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলা যাত্রা দল অ্যামেচার পার্টি করে মানুষের সাংস্কৃতির চেতনা বিকশিত করার চেষ্টা করে আসছে মধ্যবিত্তরাই। সংগ্রাম আন্দোলনে মধ্য পরিবারের যুবকরা ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেক বেশি। আমি ছোটবেলায় দেখেছি সঙ্গতি সম্পন্ন ধেনো -জমিদার বাড়ির যুবকরা উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যেত বাইরে। আবার গরীব বাড়ির ছেলেরা পেটের ভাতের জন্য শ্রম করতো সময় অপচয় করতে পারত না। অর্থাৎ সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সময় ছিল না তাদের। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবকরা সমাজ সেবামূলক কাজ করতো। বাড়িতে মা-বাবা বলতেন ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো ছেলে। উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের পরিবার গুলিতে উদারতা ত্যাগ মধ্যবিত্তদের মধ্যেই পরিলক্ষিত হতো। এভাবে বিভিন্ন আন্দোলনে, কৃষক আন্দোলনে প্রান্তিক মানুষদের গণআন্দোলনে মধ্যবিত্ত যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে দেখেছি আমি স্বচক্ষে। চারিত্রিক গঠনটা এভাবেই তৈরি হতো। ফলে তারা যে কোন দায় ঝুঁকি নিতে পারত। উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্তের মানুষরা তাদের বাড়ির যুবকরা সামাজিক কোনো কাজে এগিয়ে আসতো না। শ্রেণীগত অবস্থান তাদের সবচাইতে বড় বাধা। আর এই বাধা কাটিযে উঠতে পারতো মধ্যবিত্তরা। তাই নিজের পকেট সামাল দেয়ার অভ্যাসটা তৈরি হয়েছিল উচ্চবিত্তদের মধ্যে এবং নিম্নবিত্তের মানুষের মধ্যে। সামাজিক যেকোনো বড় কাজে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব ছিল উদার প্রকৃতির মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের মধ্যে। অন্ধ কুসংস্কার বিমুখ যুবকরা গনশিক্ষা প্রচারের দিকে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখত। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোতে বিশেষ করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে চলছে তাতে মধ্যবিত্ত মানুষদের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। মধ্যবিত্তরা ক্রমশ অর্থনৈতিক দিক থেকে তলিয়ে যাচ্ছে। নিম্নবিত্তদের সংখ্যা বাড়ছে। আশঙ্কার কথা নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষদের মধ্যে সমাজসেবামূলক উন্নতমানের চিন্তাভাবনার মানসিক খোরাক তাদের মধ্যে জন্মায় না। তাই বড় কোন উন্নয়নমূলক সাংগঠনিক কাজে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার যুবকের সংখ্যা কমছে আমার বিশ্বাস। পারিবারিক ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর্মসংস্থান আর্থিক সংস্থান না থাকলে সমাজসেবামূলক কাজে উদারতা তৈরি হয় না। মধ্যবিত্তদের মধ্যে আত্মমর্যাদা প্রকট। তারা হাত পেতে গরিব মানুষের মতো সরকারি অনুদান সাহায্য নিতে কুণ্ঠা বোধ করে। মূলত অর্থনীতির কারণেই তাদের মধ্যে বিপর্যয় দেখা দেয়। কারণ তারা হিসেবী নয়। আবার তারা ১০০ দিনের কাজ করে কোন রকমে ঘাটতি পূরণ করতে এগিয়ে আসতো নাআমি নিজের চোখে দেখেছি এবং নিজেও অংশগ্রহণ করেছি প্রবল বন্যার সময় ভাঙ্গন প্রতিরোধে সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলেও তাদের একটু টিফিনের ব্যবস্থা মধ্যবিত্ত যুবকরা পকেট থেকে দিয়েছে। সবাই পালিয়ে গেলেও কাজের শেষ পর্যন্ত তারাই বসে থাকতো। তাই মধ্যবিত্তদের প্রতি আমার চিরকালীন শ্রদ্ধাবোধ। আবার এই মধ্যবিত্তরাই হারিয়ে যাচ্ছে ,বিপর্যস্ত হচ্ছে।
যখন সামাজিক বিপর্যয় ,অর্থনৈতিক বিপর্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে শুরু হয় তখন নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্তরা রেহাই পায় না। এই বিপর্যয় ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বাড়তে থাকবে। বিপর্যয় মোকাবেলা করার হাজার চেষ্টা করেও লাভ হয় না। মধ্যবিত্ত পরিবার গুলিতে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা নেই।সুতরাং এই শ্রেণীবিভক্ত সমাজে বিপর্যয় আসবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিপর্যয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মাটির কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। বিপর্যয়টা শেষ কথা নয়। একটা সময় আসে যখন আপনি বিপর্যয়কে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিছুতেই নিজেকে হারিয়ে ফেলা যাবে না।মাথা ঠান্ডা রেখে বিপর্যয় মোকাবেলা করা একজন পরিশ্রমী মেধাবী মানুষের কাজ।
যতই অন্ধকার কালো রাত হোক না কেন সূর্য উঠবেই। এই শ্রেণীবিভক্ত সমাজে বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হবেই বিপর্যস্ত মানুষকে তারই শ্রেণী স্বার্থে। উচ্চ বর্গের মানুষ তার শ্রেণীর কথা ভাববে আর নিম্ন বর্গের মানুষ তার শ্রেণীর কথা ভাববে না তা কি করে হয়। আপনার পথের কাঁটা গাছ আপনাকেই সরাতে হবে। আর কাঁটা গাছ সরাতে গেলে আপনাকেই অস্ত্র ধরতে হবে।
[12/10, 7:18 AM] Amrit Mity Fb: বাংলাদেশের জন্য মন ভালো নেই/অমৃত মাইতি
অনেক মন খারাপের মধ্যে একটি মন খারাপ কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের আবেগের দেশ বাংলাদেশ। সবসময় মনে হতো নিজের বাড়ি নিজের ঘর নিজের দেশ আমার বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাটির সাথে মানুষের সাথে এমন নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মন খারাপ হলেই চলে যেতাম ওপারে। যখন মানসিক বিপর্যয়, মানসিক অশান্তি অনুভব করতাম তখন মনে হতো এপারে অক্সিজেনের অভাব। চলে যাই ওপারে অক্সিজেন নিতে। গ্রাম শহর রিক্সাওয়াল রেস্টুরেন্ট চায়ের দোকান বইয়ের দোকান যেকোনো বাড়ি সব যেন নিজের। ইচ্ছামত বিচরণ করি যখন মন যেমন চায়। আমার এই বাংলাদেশ। ও আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।একাত্তরেরি মুক্তিযুদ্ধ এপারে বাঙ্গালীদের আবেগ তৈরি করেছিল যে কারণে লিখেছিলাম আমার দুটি তীর্থক্ষেত্র একটি আন্দামানের সেলুলার জেল ও বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম। আমার অন্য কোন তীর্থক্ষেত্র নেই। ভাষার জন্য হাজার হাজার শহীদের রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে বাংলা ভাষার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যারা তৈরি করেছে তাদেরকে স্যালুট করা সেই মাটিকে স্যালুট করা একজন ভাষা প্রেমিকের অবশ্য কর্তব্য। কিছুতেই ভুলতে পারিনা যেদিন প্রথম দেখা হল ভাষা মতীনের সঙ্গে সেদিন নিজেকে একজন অন্য মানুষ মনে হয়েছিল। তিনিও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন বলেছিলেন কমরেড লাল সেলাম। আমি তোমাকে চিনেছি সংবাদমাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ। এমন লড়াই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বাংলাদেশ ছাড়া আর তেমন দৃষ্টান্ত আমার জানা নেই। যখন খুশি তখন চলে গেছি সেখানে। কোন কোন বছর পাঁচবার গিয়েছি, একবার গিয়েছি তিনবার গেছি। সাহিত্য সংগঠন গুলি প্রায় আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে ।আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ভাবতে পারিনি আমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সি তে আমার জন্মদিন উৎসব বন্ধুরা করতে পারে কোনদিন। বড় বড় ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। এ যে বড় ঋণ। কানাডায় একুশের পদক প্রাপ্তিতে ঢাকার পাঠক সমাবেশে প্রয়াত কবি অসীম সাহা এবং আসলাম সানীর আহবানে সম্বর্ধনা যখন দেয়া হলো তখন নিজেকে গর্বিত মনে হয়েছে। মঞ্চে লিখেছিলেন বাংলা ভাষার কবি অমৃত মাইতি। কেউবা বলেছেন মিছিলে হাঁটা কবি। শুধু ঋণ ঋণ আর ঋণ। আমার আটটা বই বাংলাদেশের বন্ধুরা প্রকাশ করেছিলেন। চট্টগ্রাম গিয়েছি মাত্র চারবার। ময়মনসিংহ চারবার ।টাঙ্গাইল আটবার। সোনারগাঁও গেয়েছি তিনবার। আরো কত জায়গায় গিয়েছি তার কোন হিসেব নেই। সংখ্যালঘুদের আজকের যে অবস্থা ভাবতে অবাক লাগে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। কোন ধর্মের প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই ।আমি কবিতা লিখেছিলাম "ভালবাসি পদ্মার পানি" আমি হিন্দু নই মুসলিম নই। আমি একজন খাঁটি বাঙালি। এতটাই আবেগ ছিল আমার বাংলাদেশ সম্পর্কে।
আজ সেখানে ভাবতে অবাক লাগে ,কষ্ট লাগে ,বুকে মোচড় দেয় কান্না ।বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং স্মৃতি যারা নষ্ট করছে তারা শুধু মৌলবাদী নয় তারা দাঙ্গাবাজ এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী। তোরা নৈরাজ্যবাদী।আওয়ামী লীগপন্থী হিন্দু হোক মুসলিম হোক সকলের বিরুদ্ধে তারা বিদ্বেষ পোষণ করছে। নির্যাতন-নিপীড়ন খুনখারাবি করছে। কিছু বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি এই কাজে মদদ দিচ্ছে। আমাদের আবেগ ও সুসম্পর্ককে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাংলা ভাষা যে সারা বিশ্বে পঞ্চম ভাষা এই অহংকারকে আঘাত করছে। আমি বিশ্বাস করি একদিন বাংলাদেশ আবার ঐক্যবদ্ধ হবে । মৌলবাদ পরাস্ত হবে।হিন্দু মুসলিমের এক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ। এ দেশ ওদেশ সর্বত্রই মৌলবাদীরা মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে পুঁজিবাদের হাত শক্তিশালী করার জন্য।
সারা বিশ্বে পুঁজিবাদ তার স্বার্থে মৌলবাদীদের ব্যবহার করে। এই মৌলবাদ যেকোনো ধর্মের হতে পারে। সমাজে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি করার ক্ষেত্রে মৌলবাদকে দায়ী করা উচিত। কোন ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু নয়। অন্তত অসহিষ্ণু হওয়া উচিত নয়। ধর্ম নিয়ে খেলাটা কোন দেশের পক্ষে কোন জাতির পক্ষে রাজনীতির পক্ষেও মঙ্গলজনক নয়। সাধারণ মানুষ চায়না সম্প্রদায়ের সম্প্রদায়ের বিভেদ বিভাজন। শ্রেণী গত কারণে পুঁজিবাদের অদৃশ্য অঙ্গুলে হেলনে মৌলবাদীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সক্রিয়তা বর্তমানে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে। একজন বাঙালি হিসেবে বাংলা ভাষা প্রেমী হিসেবে আমার বাংলাদেশেরই অস্থিরতার জন্য কষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত হাসিনা নেতৃত্বে দেশটা অনেক ভাল ছিল। ভালো থাকতে দেওয়া হবে না বলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে কিছু বিদেশী শক্তির ইঙ্গিতে। আমি বাংলা ভাষার রাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিজের মাটির মতো করেই আজও ভালবাসি। সেখানে যেতে পারছি না এ যে কি ভীষণ যন্ত্রণা কাউকে বলতে পারব না। এই যন্ত্রণা আত্মীয়ের বাড়িতে না যেতে পারা ,বন্ধুর বাড়িতে না যেতে পারার বেদনা। যাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক আছে তারাই বুঝবেন এই মানসিক কষ্ট। আমি আজও এই নিমের সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছি।
ওপারে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পর থেকে যতদিন থেকেছি বন্ধুরা তাদের নিজেদের গাড়ি বাড়ি সবকিছুই আমার জন্য ব্যবহার করতে দিয়েছে। যেন নিজের বাড়িতেই আছি, নিজের দেশে আছি এমনটাই মনে হতো আমার। থাকা খাওয়ার কোন খরচ লাগত না। ভ্রমণের জন্য কোন খরচ লাগতো না আমার। আমার সঙ্গে এবারের অক্ষর কর্মীরা গিয়েছেন ।আতিথেয়তা পেয়েছেন অন্তরঙ্গতা পেয়েছেন। আমি একটি বিষয় জোর দিয়ে বলতে পারি আতিথিয়তা অন্তরঙ্গতা শিখতে হবে বাংলাদেশীদের কাছে। কোনরকম দায়সারা কর্তব্য পালন ওপরের বন্ধুরা করে নি। একেবারে ষোল আনা বাঙালিয়ানা ।একেবারে ষোল আনার উপর ১৮।আনা অন্তরঙ্গতা। খুব কষ্ট হচ্ছে যেতে পারছি না । বারবার মনে হয় ওপারের বন্ধুরা যেন ভালো নেই। বন্ধুদের কাছে খবর পাচ্ছি কে কেমন আছে । মনে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই পাশাপাশি এই ভেবে আশ্বস্ত হচ্ছি বাংলা ভাষার টানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ত্যাগ ,শেখ হাসিনার ত্যাগ ;দেশের প্রতি আন্তরিকতা আত্মত্যাগের কথা উচ্চারিত হচ্ছে বহু মানুষের মধ্যে। আজ বড় কষ্ট হচ্ছে যেতে পারবো না একবার শেষবারের মতো !এই ৮১ বছর বয়সে একবার কি পারবো না মাটি ছুঁয়ে আসতে। ৭১ সাল থেকে অপেক্ষা করতে করতে ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়েছিলাম ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। লিখেছি " বাউল গন্ধ বাতাস/ আর সোঁদা গন্ধ মাটি/ধূসর হৃদয়ে মনে হয়/ আমি যেন খাঁটি বাংলাদেশী।" পদ্মা নদীর বক্ষে ছোট নৌকাতে ভ্রমণ করেছি। সে স্মৃতি কোনদিন ভোলা যাবে না।
২০০৩ সালে ঢাকার কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে আমাদের জন্য দাঁড়িয়েছিল সালেম সুলেরী ,আল ফারুক প্রমুখ । চট্টগ্রামের এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা কবি ও প্রাবন্ধিক কমলেশ দাশগুপ্ত। আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে চলে যাই সীতাকুণ্ড। উঠে যাই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। কখনো কক্সবাজারে সৈকতে শুয়ে থাকি। ঢাকা সদরঘাট থেকে সারারাত লঞ্চে কলম নিয়ে লিখতে লিখতে চলে গেছি বরিশাল। টাঙ্গাইল গেছি ৮ বার। সাধারণ মানুষ কবি সাহিত্যিকরা বলেছেন আপনি তো আমাদের টাঙ্গাইলের মানুষ। ময়মনসিংহ স্মৃতি প্রতিমুহূর্তে মনে পড়ে। কিছুতেই এসব থেকে মন সরাতে পারছি না। আত্মীয় বিচ্ছেদ কি পরিমান পীড়া দিতে পারে একমাত্র ভুক্তভোগীই জানে।বাংলাদেশ সাম্প্রতিক কালে তার ভয়াবহ রূপ আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমি বলে বোঝাতে পারবো না। ভাষাকে কেন্দ্র করে লড়াই করা মানুষ, ভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষার রাষ্ট্র যারা তৈরি করেছে সেই সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ জেগে উঠুক সঠিক দিশা দেখাক ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে একটা সুন্দর রাষ্ট্র পুনরায় গঠিত হোক। দায়িত্ব নিক শেখ হাসিনা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হোক বাংলাদেশ।
আবার যাবো বাংলাদেশের দিনাজপুরে। যেমন করে একুশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম হিলির বর্ডার পেরিয়ে যে সাংবাদিকটি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। জিনাতের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করেছিল। আর জিনাত আমার বোন তাদের আতিথেয়তা অন্তরঙ্গতা আমাকে নিয়ে একুশে মিছিলে অংশগ্রহণ করিয়েছে ।ভাবতে অবাক লাগে কতগুলো অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল তারা। ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে জিনাত আমার জন্য কাঁচা হলুদ তুলসী পাতার রস ঠিক ব্যবস্থা রাখতো। এসব ভুলে যাই কি করে। ভাই ফোঁটার দিন দেয়ালে আমার নাম করে চন্দনের টিপ লাগিয়ে দিত জিনাত। ফেরদাউসি কুইন একেবারে নির্দেশ জারি করেছিল "তুমি ঢাকা শহরে কোনদিন আমার বাড়ি ছাড়া অন্যত্র থাকবে না। তোমার বয়স হয়েছে কখন কি হবে !আমার কাছে থাকলে আমি স্বস্তি অনুভব করব ।আমারও তোমাকে নিয়ে কোন টেনশন থাকবে না ।আমার গাড়ি আছে। কোন অভাব নেই আমার। তোমাকে ভিআইপির মত রাখতে পারব । ঢাকা এয়ারপোর্ট এর কাছে তো উত্তরাতে আজিজের বাড়িটাই ছিল আমার একটা ঠিকানা। আজিজের পুত্র পুত্রবধূ নাতি-নাতনি তার সহধর্মিনী আমাকে প্রতি মুহূর্ত আন্তরিকতার ডোরে বেঁধে রাখত। অন্তত এক হাজার বন্ধুর কথা বলতে পারি যাদের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এবং সে সম্পর্ক আজও আছে।
আমাদেরকে ওপারের।বন্ধুরা যেভাবে বুকে আগলে নিতো, আপন করে নিতে পারতো আতিথেয়তা দিয়ে আমরা হয়তো অতটা পারবো না। আমাদেরও বিশ্বাস আমরা সেভাবে আতিথেয়তা দিতে পারিনি। অবশ্য আমি বারবার তাদেরকে তাদের মত করে আতিথিয়তা দিতে চেষ্টা করেছি। এ কারণেই আমার কষ্টটা সবচেয়ে বেশি। আজ খুব অনুভব করি আলিঙ্গন অন্তরঙ্গতা। আমি যেখানেই থাকি না কেন সেখানে সবাই এসে হাজির হত আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। এসব আমার অনেক বড় পাওনা। কামাল লোহানী আমাকে ছাড়তে পারছেন না আমিও তাঁকে ছাড়তে পারছি না। আমি বামপন্থী মানুষ বলেই তিনি আমাকে খুব নিবিড় ভাবে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। রাত্রি একটা দেড়টা দুটো পর্যন্ত চলছে আমাদের কথাবার্তা।নির্মলেন্দু গুণ আমারই টানে চলে এসেছেন পাঠক সমাবেশে। আমি কৃতজ্ঞ। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এখন থাকে টরেন্টোতে।কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠদের বন্ধুত্ব আজ রয়েছে। 'ভালবাসি পদ্মার পানি"" প্রবাসী পাখির গান"প্রকাশ করেছিল সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল প্রকাশ করেছিল। আপন ভাইয়ের মত প্রয়াত অসীম সাহা। অঞ্জনা সাহা ভাইফোঁটা দিয়েছিল । ভুলে যাই কি করে । তপংকর চক্রবর্তী আজও ডাকে। খুবই যোগাযোগ রাখে রোকেয়া ইসলাম। আমার জন্মদিনে একটি দৈনিক কাগজে আমাকে নিয়ে লিখেছিল রবীন্দ্র গোপ। তারই আমন্ত্রণে সোনারগাঁও বিরাট সাংস্কৃতিক মেলাতে একবার আমি একটি বিশেষ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলাম।
আমার বিশ্বাস মৌলবাদ ধ্বংস হবে উগ্রপন্থীরা শুভবুদ্ধি মানুষের কাছে পরাভূত হবে। আবার আমরা বাংলা ভাষাকে বাঙালিয়ানাকে সমৃদ্ধ করতে পারব। ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘিষ্ঠদের উপর অবিচার অতুলন করে। তাই সব সময় সংখ্যালঘুদের রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। রাষ্ট্রকেই সংখ্যালঘুদের সার্বিক বিকাশে সক্রিয় হতে হবে। এই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বর্তমান বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী । তাই সংবাদ মাধ্যমে শুনতে পাচ্ছি শেখ হাসিনাকেই চাই।আমরা দুই বাংলা আবার আত্মীয় হব।
[12/11, 8:50 AM] Amrit Mity Fb: সৃষ্টি ও সংস্কার/অমৃত মাইতি
সৃষ্টি মানে সম্পূর্ণ নতুন কিছু উৎপাদন। যা আগে কখনোই ছিল না। সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবন বা উৎপাদন। আর এই সৃষ্টির সঙ্গে প্রচলিত ব্যবস্থার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। যিনি সৃষ্টি করেন তাঁর নিজস্ব চিন্তা ও সাধনা প্রসূত ফসল। সৃষ্টির সঙ্গে কোন পুরাতনের পরিচয় থাকে না বা সম্পর্ক থাকে না। সৃষ্টি হলো সম্পূর্ণ এক নতুন চেতনা। সৃষ্টিশীল মানুষ তার উদ্ভাবনী শক্তি ও চিন্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এক নতুনের জন্ম দেয়। প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা থাকে ,কুসংস্কার থাকে। সৃষ্টি এই সমস্ত থেকে একেবারে মুক্ত এবং প্রভাব মুক্ত। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে পুরাতনের প্রভাব থাকে না। পুরাতনের প্রভাব থাকলে নতুন কিছুর দাবী করা যায় না। পুরাতনের সমস্ত বৃত্তের বাইরে নতুনের সৃষ্টি। প্রচলিত সংস্কারের মধ্যে আটকে থাকলে কিংবা পুরাতনকে আঁকড়ে ধরে রাখলে কখনোই নতুনের দিকে এগোনো যায় না। এবং নতুন কিছু উদ্ভাবন করা যাবে না। তাই সৃষ্টি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এক নতুন উদ্ভাবন। একজন বিজ্ঞানীর মধ্যে সৃষ্টিশীলতা থাকে ,তাই পুরাতনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পুরাতনকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে একেবারে মুক্ত মনের পরিচয় দেন তিনি। প্রাচীন কোন মত বা মতবাদ তাকে প্রভাবিত করতে পারেনা। পৌরাণিক বিষয়ের প্রভাব নতুন সৃষ্টিকে স্পর্শ করতে পারেনা।পুরাতন তার পুরাতনী ব্যবস্থার মধ্যে আটকে থেকে যায়। সৃষ্টি সহস্র যোজন দূরে চলে যায় ,সৃষ্টির উল্লাস নিয়ে। সেখানে থাকে না কোন জীর্ণ কুয়াচার। সেখানে থাকে না কোন প্রাচীন অযৌক্তিক গোঁড়া মতবাদ। সৃষ্টিশীল মানুষ তেঁতুল গাছের তলায় দাঁড়িয়ে জাবর কাটা বলদের মতো নয়। অশ্বখুরের মতো ধুলা উড়িয়ে সামনের দিকে সৃষ্টির ঘোড়া দৌড়ে যায়। বাঁধন মুক্ত সংস্কার মুক্ত চেতনার চাবুক নিয়ে এগোতে থাকে।
সৃষ্টিশীল মানুষ কেবলমাত্র নিজের মেধার কাছে দায়বদ্ধ।
অলৌকিকতায় বিশ্বাসী কোন মানুষ সৃষ্টিশীল হতে পারেনা তার ক্ষমতা দক্ষতা দৃঢ়তা অলৌকিক নয় লৌকিক। অর্থাৎ যা আছে বাস্তব তার ভিত্তিভূমি।তিনি ধার করতে জানেন না ।প্রয়োজন হয় না। তিনি সূর্য চাঁদের মতো আলো ধার করে না।তিনি অফুরন্ত। তিনি নিজেই শক্তিশালী। যখন তিনি নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবেন তখন তিনি আর সৃষ্টির জগতে থাকতে পারবেন না। নিজেই নিজের সৃষ্টির সূত্র তৈরি করেন। তাঁর সৃষ্টির উপাদান একান্ত আপন। নিজস্ব জগত। তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্র কুয়াশাহীন ধোঁয়াশাহীন এক উজ্জ্বল অবয়ব, সমগ্র বিশ্ব তাঁর সৃষ্টির আধার। তিনি কখনো কোন অলৌকিকতার কাছে হাতজোড় করবেন না। কারণ তিনি অলৌকিকতার ঊর্ধ্বে। তাকে অন্য কোন শক্তি পরিচালিত করে না। আমার প্রেরণা সমাজ মানুষ সময়। তাই আমি কখনো অন্য কোন শক্তির উৎস বিশ্বাস করিনা এবং হাতজোড়ো করি না। যদি কোন সৃষ্টিশীল মানুষ তার সৃষ্টির সূত্র হারিয়ে ফেলে তাহলে সৃষ্টির জন্ম হবে না আলোর মুখ দেখতে পাবে না এবং অন্য কোন শক্তি তার সৃষ্টিকে বাস্তবায়িত করতে পারবে না। মেধা যেমন নিজের আত্মবিশ্বাস ও নিজের সবকিছু দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেন।
অন্ধ সংস্কারের মধ্যে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন তাহলে কোনদিন সৃষ্টির মুখ দেখতে পাবেন না। আমি সৃষ্টিশীল মানুষকেই শ্রদ্ধা করি। কারণ তিনি এক বিরাট শিশু পৃথিবীকে জয় করার মন আছে তার। দুর্দান্ত সাহস আছে তার।একজন মা নিজের শক্তি সামর্থের উপর বিশ্বাস ভরসা রেখে সন্তানের জন্ম দেয়। অন্যের সাহায্যের উপর তিনি ভরসা করেন না। নিজের প্রাণের বিনিময়ে সন্তানের জন্ম দেয়।একজন সামান্য লেখক হিসেবে আমি বলতে পারি আমি অন্য কোন শক্তির কাছে অলৌকিকতার কাছে দায়বদ্ধ নই। আমার চৈতন্য আমার সৃষ্টির মূল আশ্রয় এবং উৎস। যেদিন এই অবস্থান থেকে অন্যমনস্ক হব সেদিন একটি শব্দও আমি লিখতে পারবো না। আমি বিশ্বাস করি শিল্প সাহিত্য ও বিজ্ঞান সমস্ত সাধনার ক্ষেত্র হল আমাদের মন। আমাদের মনোজগত।এর বাইরে আর কিছু নেই। তাই আমি কখনো কোন অলৌকিক শক্তির কাছে হাতজোড়া করি না।
যখন মানুষের মেধা বিকশিত হয়নি ,মেধা ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন তখন তাকে যে যা বলেছে তাই সে বিশ্বাস করেছে। কেবলমাত্র প্রাকৃতিক কারণে নানাবিধ
দুর্যোগ দুর্ঘটনার ব্যাখ্যা বা কারণ মানুষ বুঝতে পারত না বলেই কার্যকারণ সম্পর্ক না জেনেই অলৌকিক শক্তিকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকত। বুদ্ধিমান লোক এই অজ্ঞতার বোকামির সুযোগ নিত। এভাবেই ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হয় এবং যুক্তিহীন বোকা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, বিস্তার লাভ করে। এখনো এই বিশ্বাস নিয়ে অনেক শিক্ষিত মানুষ নিজের শক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে অলৌকিক শক্তিকেই প্রাধান্য দেয়। যখন শিক্ষিত মানুষরা অলৌকিক শক্তির কাছে হাতজড়ো করে এবং ভিড় করে তখন তো সাধারণ মানুষ তার অজ্ঞতার কারণেই অবাস্তবকেই বিশ্বাস করবে।স্থূল মস্তিষ্কের বা বুদ্ধির মানুষরা বেশি সময় যুক্তিকে ধরে থাকতে পারে না একসময় হাল ছেড়ে দেয় ।তখন অলৌকিকতার জন্ম হয়।আর একটা শ্রেণীর মানুষ সুকৌশলে এই সহজলভ্য ব্যবস্থাকে অলৌকিকতা ধর্মান্ধতা সংস্কারকে সাধারণ মানুষের মধ্যে চালিয়ে যাবে। এক সময় ব্রাহ্মণ সমাজে এ সবই প্রাধান্য পেত। তাইতো বিজ্ঞানীদেরও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যুক্তিবাদ এবং বিজ্ঞান যত অগ্রসর হবে তত মানুষের মন থেকে সংস্কার মুছে যাবে ।অন্ধকার দূরীভূত হবে। জ্ঞানের আলো বিকশিত হবে। আমরা যারা যুক্তিবাদী আমাদের অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। অনেক বেশি সময় দিতে হবে অজ্ঞতাকে কুসংস্কারকে অজ্ঞানতাকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করা। এই বিশ্বে মানুষ এই সমস্ত আবিষ্কার করেছে সৃষ্টি করেছে। সে সামাজিক ক্ষেত্রে হোক অর্থনীতির ক্ষেত্রেই হোক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই হোক। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে মানুষ। জীবনদায়ী ওষুধ তৈরি হয়েছে মানুষ। মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছে মানুষ। গোটা পৃথিবীটা বিজয় করতে পেরেছে মুহূর্তের মধ্যে আকাশকে জয় করতে পেরেছে মানুষ। পায়ে হাটা পরিত্যাগ করে সাইকেল দুই চক্র যান তারপর মোটরগাড়ি এরোপ্লেন ধীরে ধীরে মানুষ সময়টাকে ব্যবহার করতে শিখেছে।কারণ জীবনে সময়টা কিন্তু অফুরন্ত নয়। মানুষ এখন ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে কলকাতা শহরে গিয়ে কাজ সারে আবার ফিরে আসে। কোন অলৌকিক শক্তি তাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে না। এখনকার মানুষ ঠাকুর ঘরে হাতজড়ো করে বসে থাকার সময় পায় না। নেহাতই প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে থেকে থেকে কোন রকমে মাথায় হাতটা ছুঁয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায় ।এটাও থাকবে না কিছুদিন পরে। যতদিন যাবে অকারণ সময় নষ্ট মানুষ আর করবে না। কর্মের মধ্যে থাকতে থাকতে মানুষ অলৌকিকতা ভুলে যাবে।
সংস্কার একেবারেই পরস্পর বিরোধী। সৃষ্টি সামনের দিকে এগিয়ে যায় আর সংস্কার মানুষকে পিছনের দিকে টেনে রাখে। সৃষ্টিশীল মানুষই একমাত্র শ্রদ্ধার পাত্র আমার কাছে। একজন লেখকও নিজের মেধা ও চেতনা কে আশ্রয় করতে পারে, ভরসা বিশ্বাস করতে পারে ।অন্য কোন শক্তির কাছে তিনি কেন মাথা নত করতে যাবেন?
আমাদের চিন্তার জগত আর বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে আমাদের লিখিয়ে নেয় অনেক কথাই ।সে ক্ষেত্রে অন্য কোন শক্তির বাস্তবতা বা যৌক্তিকতা নেই। না আমাদের অন্য কেউ লিখিয়ে নেয় না পরিস্থিতি আমাদেরকে লিখিয়ে নেয়। তখন মনে হয় আমি পারি আমি পারি আমি পারি। এভাবে নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং জেদ এবং সৃষ্টির আলোকিত পথ আমার সামনে খুলে যায়। আমি পথ দেখতে পাই। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। নিজের অন্তর্নিহিত আলো আমাকে পথ দেখায়। অন্য কোন আলো আমার প্রয়োজন হয় না।আমি যে কোন কুয়াশা ভেদ করে এগিয়ে যেতে পারি। তাইতো একমাত্র মানুষই সর্বশক্তিমান। আমি সৃষ্টি বিশ্বাস করি। সংস্কার আমার কাছে মুর্খামি। সৃষ্টির জয়যাত্রাই হল পৃথিবীর গতি,। সংস্কারকে অস্বীকার করা যেতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর গতিকে অস্বীকার করা যাবে না। সংস্কার আপেক্ষিক। তাই সৃষ্টি ও পৃথিবীর গতিকে প্রাধান্য দিতেই হবে।