অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: প্রয়াত শিক্ষকের স্মরণে প্রকাশিত হলে দেওয়াল পত্রিকা ‘দেওয়ালের কান'। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁচা পাকা হাতের লেখায় তাদের প্রিয় মৌসম স্যারকে নিয়ে লেখায় ভড়ে উঠেছে দেওয়াল পত্রিকা। কেউ কবিতায়, …
অরুণ কুমার সাউ, তমলুক: প্রয়াত শিক্ষকের স্মরণে প্রকাশিত হলে দেওয়াল পত্রিকা ‘দেওয়ালের কান'। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁচা পাকা হাতের লেখায় তাদের প্রিয় মৌসম স্যারকে নিয়ে লেখায় ভড়ে উঠেছে দেওয়াল পত্রিকা। কেউ কবিতায়, কেউ স্মৃতিচারণায়, কেউ গল্পে, ছবিতে মৌসম কথা তুলে ধরেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি প্রিয় শিক্ষকের সহকর্মীরাও কলম ধরলেন। কোন কোন ছাত্র প্রথমবার স্যারকে নিয়ে লিখলেন ।
শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের বঁহিচাড় বিপিন শিক্ষা নিকেতন - এর প্রিয় শিক্ষক প্রয়াত মৌসম মজুমদারের ৫০ তম জন্মদিন উপলক্ষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহ শিক্ষক, শিক্ষা কর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে এই দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। শিক্ষক মৌসম মজুমদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতি চারণ করা হয় । পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে প্রয়াত শিক্ষক মৌসম মজুমদারের জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে জন্মস্থান অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের আস্তারা ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরে বেশ কিছু পলাশ ও বকুল চারা রোপন করা হয়।
ভূগোল নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে দুই ক্ষেত্রেই গোল্ড মেডেলিস্ট হওয়ার অনন্য কৃতিত্ব অর্জন সেই সাথে ভূগোলে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য 'লক্ষ্মীবালা সামন্ত স্মৃতি পুরস্কার' পেয়েছেন । শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "জঙ্গলমহলের পরিবর্তিত পরিবেশে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব" শীর্ষক বিষয়ে গবেষণা করে পি এইচ ডি লাভ করেও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যাননি। স্কুলে পড়ানোর অদম্য ইচ্ছে নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পশ্চিমাঞ্চল শাখায় প্রথম হয়ে বেছে নিয়েছিলেন তমলুক শহরের প্রান্তে এক অখ্যাত অনাড়ম্বর 'বঁহিচাড় বিপীন শিক্ষা নিকেতন'কে। এখানকার পরিবেশ, সহকর্মী, অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রীদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন আজীবন। বাবা ও দাদার স্মরণে বিদ্যালয়ে দুটো কক্ষ নির্মাণ করেছেন। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপন করেছিলেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ও এপিজে আবদুল কালামের মূর্তি। স্কুলের হঠাৎ অসুস্থ ছাত্র ছাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দিয়েছেন রোগীর শয্যা। বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের তিনি সন্তান ও সহকর্মীদের ভাই ,বন্ধুর মত ভালবাসতেন।
তমলুকের বঁহিচাড় বিপিন শিক্ষা নিকেতন - এর ছাত্র ছাত্রীরা এদিন লেখায় এবং ছবিতে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আপ্লুত। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী বর্ণিশা রাউত বলে, স্যার আমাদের হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন যেমন ভাবে দেওয়াল পত্রিকায় লিখতে হয়। আর আজকে সেই স্যারের কথা দেওয়াল পত্রিকায় লিখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু স্যারকে লেখা দেখাতে পারলাম না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাঙ্ক শেখর ঘোরাই বলেন, মৌসম বাবু আমাদের স্কুলের অন্যতম একটি স্তম্ভ ছিলেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছিল মৌসম স্যারের হাত ধরে। আজকে দেওয়াল পত্রিকার মাধ্যমে উনাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য বলে মনে হচ্ছে।