Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পুনর্মিলন উৎসবে মিলনমেলা: সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের পঞ্চম প্রাক্তনী সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর : সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর সভাগৃহ পরিণত হল এক আবেগঘন মিলনমেলায়। আয়োজিত হলো সংস্কৃত বিভাগের পঞ্চম পুনর্মিলন অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই প্রাক্তনী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বর্তমান ছাত্রছাত্র…


নিজস্ব প্রতিবেদক, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর : সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর সভাগৃহ পরিণত হল এক আবেগঘন মিলনমেলায়। আয়োজিত হলো সংস্কৃত বিভাগের পঞ্চম পুনর্মিলন অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই প্রাক্তনী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সকাল ১১টায় নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। এর পরই শুরু হয় প্রাক্তনীদের প্রাণের অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মহীদাস ভট্টাচার্য । প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. তপন কুমার দত্ত এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃত বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. ভবশঙ্কর মুখার্জী । এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যোগদা সৎসঙ্গ পালপাড়া মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. লক্ষ্মীকান্ত ষড়ঙ্গী ও সবং কলেজের সংস্কৃত বিভাগের অন্যান্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকাবৃন্দ। একে একে সকলের উপস্থিতি ও আন্তরিক বক্তব্যে অনুষ্ঠান পায় অন্য মাত্রা।

এবারের অনুষ্ঠানের আর একটি বিশেষ তাৎপর্য ছিল-সংস্কৃত বিভাগের বরিষ্ঠ অধ্যাপক ড. ভবশঙ্কর মুখার্জী মহাশয়ের কর্মজীবনের অবসর উপলক্ষে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদান। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তাঁর নিষ্ঠা, জ্ঞানদীক্ষা ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহের কথা স্মরণ করে প্রাক্তনী ও বর্তমানরা একবাক্যে বলেন-আমাদের প্রিয় ভব স্যার কেবল একজন শিক্ষকই নন, তিনি ছিলেন সত্যিকারের প্রেরণার উৎস। উত্তরীয়, মানপত্র ও স্মারক প্রদান এবং আবেগঘন শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে তৈরি হয় এক অনন্য আবহ। এই দিন বিদ্যাসাগর সভাগৃহ সাক্ষী রইল এক স্মরণীয় সম্মান প্রদানের মুহূর্তের।

অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয় মঙ্গলাচরণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে। স্বাগত ভাষণে প্রাক্তনী সংসদের সভাপতি লক্ষ্মণ মণ্ডল বর্তমান ও প্রাক্তনদের মিলনের আনন্দঘন আবহ তুলে ধরেন। একইসঙ্গে প্রাক্তনী সংসদের সম্পাদক ড. গণেশ তোষ মহাশয় তাঁর হৃদয়গ্রাহী ভাষণে পুনর্মিলনের তাৎপর্যকে স্মরণীয় করে রাখেন। এছাড়াও প্রত্যেক প্রাক্তনীর কন্ঠে ভেসে আসে স্মৃতির আলোছায়া, আবেগের তরঙ্গ, জীবনের অমূল্য দিনগুলোর স্মৃতিচারণ।

অনুষ্ঠানের আবেগঘন মুহূর্তে অনুষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান অতিথি ও বিশিষ্ট অতিথির হাত ধরে প্রকাশিত হয় স্নাতকোত্তর সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ড. গগনচন্দ্র দে মহাশয়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও পরিশ্রম সফলতাস্বরূপ আচার্য-স্মৃতি সুধা” নামক একটি স্মারকগ্রন্থ, যা প্রাক্তন-বর্তমান সকলের কাছে হয়ে ওঠে অমূল্য সম্পদ। সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী ও ওড়িয়া-এই পাঁচটি ভাষায় রচিত প্রবন্ধসম্ভারে সমৃদ্ধ গ্রন্থটি বহুভাষিক সাহিত্যিক সেতুবন্ধনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রাক্তনীরা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানান, "আচার্য-স্মৃতি সুধা" শুধু একটি গ্রন্থ নয়, বরং এটি স্মৃতি, জ্ঞান ও শ্রদ্ধার এক চিরন্তন সংকলন।

এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. তপন কুমার দত্ত মহাশয় তাঁর অমূল্য ভাষণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিকে একটি অন্য মাত্রা প্রদান করেন। এছাড়াও বিদায়কালীন এই অনুষ্ঠানে ড. ভবশঙ্কর মুখার্জী মহাশয় তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের কয়েকটি স্মরণীয় ঘটনা তুলে ধরেন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক, শিক্ষা দানকালে পাওয়া অভিজ্ঞতা ও নানা স্মৃতিরেখা তিনি ভাগ করে নেন সকলের সঙ্গে। উপস্থিত সবাই গভীর মনোযোগে তাঁর বক্তব্য শোনেন এবং করতালির মধ্য দিয়ে তাঁকে জানায় শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।

অনুষ্ঠানের অন্তিম পর্বে প্রাক্তনী সংসদের পক্ষ থেকে সবার প্রিয়তম অধ্যাপক ড. ভবশঙ্কর মুখার্জী মহাশয়কে উত্তরীয়, মানপত্র, পুস্তক, কলম, পঞ্চফল, চারাগাছ ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রাক্তনীরা নিজ নিজ উপহার প্রদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনপুরঃসর এই অনুষ্ঠানটিকে চিরস্মরণীয় করে রাখেন। অন্তিমে অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. মহীদাস ভট্টাচার্য মহাশয়ের অনুপ্রেরণামূলক ও স্মৃতিরোমন্থক বক্তব্যে সভাগৃহে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এই পুনর্মিলন কেবল প্রাক্তনী-অধ্যাপকদের সৌহার্দ্য ও স্মৃতিচারণের মিলনমঞ্চ নয়, বরং আগামী দিনের প্রজন্মের কাছে এক প্রেরণার উৎস। সংস্কৃত বিভাগের ঐতিহ্য, স্নেহমাখা সম্পর্ক এবং একাত্মতার চিরন্তন বার্তা যেন অমলিন হয়ে রইল বিদ্যাসাগর সভাগৃহে আয়োজিত এই পুনর্মিলন উৎসবে।