অরুণ কুমার সাউ, তমলুক : শারদ উৎসবের আনন্দময় সমাপ্তি এবং একই সঙ্গে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভের জয় উদযাপন— এই দ্বৈত বার্তা নিয়েই প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় তমলুকে পালিত হলো রাবণ বধ উৎসব। মা দুর্গাকে চোখের জলে বিদা…
অরুণ কুমার সাউ, তমলুক : শারদ উৎসবের আনন্দময় সমাপ্তি এবং একই সঙ্গে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভের জয় উদযাপন— এই দ্বৈত বার্তা নিয়েই প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় তমলুকে পালিত হলো রাবণ বধ উৎসব। মা দুর্গাকে চোখের জলে বিদায় জানানোর এই দিনেই সারা দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তমলুক পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাধাবল্লভপুর ফুটবল ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান।
অশুভ শক্তির প্রতীক রাবণ দহন বা রাবণ বধের এই রীতি মূলত বিজয়া দশমী তিথিতে পালিত হয়।পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ত্রেতা যুগে এই দিনেই শ্রীরামচন্দ্র দশানন রাবণকে বধ করে অধর্মের নাশ ঘটিয়েছিলেন। একইসঙ্গে, এটি দেবী দুর্গার নয় দিন টানা যুদ্ধের পর মহিষাসুরকে বধ করে শুভের বিজয় নিশ্চিত করার দিন হিসেবেও মানা হয়। রাবণের দশটি মাথাকে মানুষের দশটি খারাপ মানসিকতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়— যেমন, রাগ, লোভ, হিংসা, অহংবোধ, অসহিষ্ণুতা, অসংবেদনশীলতা, ভয়, ঘৃণা, অনুশোচনা ও লালসা। এই খারাপ স্বভাবগুলির বিনাশসাধনের প্রতীকী বার্তা নিয়েই রাবণ দহন উৎসব পালিত হয়। এদিন রাধাবল্লভপুর ফুটবল ময়দানে ‘রাধাবল্লভপুর দুর্গোৎসব কমিটি'র আয়োজনে পালিত হলো তাদের একাদশতম বর্ষের রাবণ বধ উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মেতে ওঠে এলাকার মানুষ। বিশাল আকারের রাবণের প্রতিমূর্তি দহনের পূর্বে অনুষ্ঠিত হয় জমকালো আলো বাজির প্রদর্শন, যা দেখতে মাঠে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ।
এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট জনেরা— প্রশান্ত মাভোই, অদ্বিতীয় সামন্ত, সঞ্জয় কুমার কর সহ দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য শিক্ষক শৈবাল বিশ্বাস, বাবুলাল বিশ্বাস, শুকদেব বিশ্বাস, রাজু খাটুয়া, অঞ্জন মন্ডল প্রমুখ।রাবণ বধ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিজয়া দশমীর চিরাচরিত রীতি মেনে এই দিন দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়ার আগে বিবাহিত মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। দেবীর সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে বরণের পর তাঁরা একে অপরকে সিঁদুরে রাঙিয়ে দেন। এই পর্বের শেষে চলে মিষ্টিমুখের পালা। উৎসবের এই সমগ্র আয়োজনটি নাচ, গান এবং বিপুল উৎসাহের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়, যা বিজয়া দশমীর আনন্দকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়।অশুভ শক্তির বিনাশের বার্তা এবং পারস্পরিক মিলনের এই উৎসব তমলুকবাসীকে এক আনন্দঘন দিনের সাক্ষী রাখলো।