Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে নন্দকুমারের কোলসর গ্রাম — আড়াইশো নার্সারিতে কর্মসংস্থানের নব অধ্যায়

নন্দকুমার , কাজল মাইতি, দেশ মানুষ: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার থানার ছোট্ট গ্রাম কোলসর। এক দশক আগেও যে গ্রাম ছিল আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতোই, আজ তা পরিচিতি পেয়েছে ‘ফুলের গ্রাম’ নামে। প্রায় আড়াইশো ছোট-বড় নার্সারি নিয়ে সেজে ও…


নন্দকুমার , কাজল মাইতি, দেশ মানুষ: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমার থানার ছোট্ট গ্রাম কোলসর। এক দশক আগেও যে গ্রাম ছিল আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতোই, আজ তা পরিচিতি পেয়েছে ‘ফুলের গ্রাম’ নামে। প্রায় আড়াইশো ছোট-বড় নার্সারি নিয়ে সেজে ওঠা এই গ্রামটি এখন রাজ্য তথা রাজ্যের বাইরেও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। শীত পড়তেই ফুল ও ফলের চারার চাহিদা আকাশছোঁয়া। আর সেই চাহিদা মেটাচ্ছে কোলসর। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর বা রাজ্য নয়— ওড়িশা, বিহার, এমনকী উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় পর্যন্ত এই গ্রামের চারা নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে।

​গ্রামের প্রতিটি মোড়ে আজ কেবলই সবুজের সমারোহ। গ্রামবাসীদের দাবি, কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলে নার্সারি ব্যবসাই এখন গ্রামের মূল জীবিকা। কোলসরের প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত এই পেশার সঙ্গে। চারা তৈরি, জলসেচ ও পরিচর্যা, বা বিক্রির দায়িত্বে— গ্রামের প্রতিটি পরিবারেই লেগেছে এই ব্যবসার ছোঁয়া। ফুলের বাগানের যত্ন থেকে শুরু করে ছাদবাগানের নকশা পর্যন্ত— প্রত্যেকেই এই কাজের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করেছেন। বেকারত্ব দূর করে স্বনির্ভরতার এক নতুন পথ দেখিয়েছে এই ‘ফুলের বিপ্লব’।

​​এক নার্সারির মালিক বুদ্ধদেব বেরা জানালেন, “চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে এই বছরই আমরা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার বগেনভেলিয়া গাছের চারা তৈরি করেছি। আগামী বছরে আমাদের লক্ষ্য এক থেকে দেড় লক্ষ চারা উৎপাদন।” তাঁর কথায়, এই কাজের জন্য আন্তরিকতা ও পরিশ্রমই মূল পুঁজি। বুদ্ধদেব বেরার নার্সারিতেই বর্তমানে পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন মাসিক বারো হাজার টাকা বেতনে। যাঁরা কিছুদিন আগেও ছিলেন সম্পূর্ণ বেকার, তাঁরা এখন এই ব্যবসার মাধ্যমে নিশ্চিত রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন।


শুধু স্থানীয় বাজার নয়, দূরদূরান্ত থেকেও গাছপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন এই গ্রামে। উত্তরপ্রদেশের লখনউ জেলা থেকে আসা ক্রেতা আশীষ তিওয়ারি জানালেন, “এখানকার নার্সারি দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ। মালিকেরা প্রতিশ্রুতি মতোই সঠিক মানের চারা দেন। সময়মতো ফুল ও ফল আসে— যা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করে।” তিনি আরও বলেন, “শান্তির খোঁজে কেউ হিমালয়ে যান, আমরা প্রকৃতিপ্রেমীরা আসি এই কোলসরের ফুলের চারা সংগ্রহ করতে।”

​একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন শিলিগুড়ি থেকে আসা ক্রেতা গৌরব আগরওয়াল। তাঁর কথায়, “আমাদের এলাকার নার্সারিগুলিতে যে চারা গাছ পাওয়া যায়, সেগুলি সহজে টেকে না। কিন্তু নন্দকুমারের কোলসরের চারা গাছগুলির গুণমান ও স্থায়িত্ব অসাধারণ।”


​কোলসর গ্রামে উৎপাদিত ফুলের মধ্যে বগেনভেলিয়া বা কাগজ ফুল এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়। প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ প্রজাতির কাগজ ফুল এখানে উৎপন্ন হচ্ছে। এর পাশাপাশি জবা, গাঁদা, গোলাপ, পিটুনিয়া ইত্যাদি ফুলেরও ব্যাপক চাহিদা। এই ফুলগুলির যত্ন নেওয়া সহজ হওয়ায় সাধারণ গৃহস্থরাও ছাদবাগানে এসব চারা লাগাচ্ছেন। দামও সাধারণের সাধ্যের মধ্যে— মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায় বিভিন্ন আকার-প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ।

​নার্সারিগুলির পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে ছাদবাগান পরামর্শ কেন্দ্রও। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফুল ফোটা পর্যন্ত গ্রাহকদের সহায়তা করা হয়। ফলে যারা একসময় চাকরির খোঁজে হতাশ ছিলেন, তারাও এখন এই পেশার মাধ্যমেই আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। কোলসর এখন কেবল একটি গ্রাম নয়, এটি কর্মসংস্থান ও স্বনির্ভরতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।