তমলুক ,কাজল মাইতি,দেশ মানুষ : তমলুকে মঞ্চস্থ হল চাকদহ নাট্য জনের 'জগাখিচুড়ি টু'; নাট্যশিল্পী সরব হলেন বর্তমান সমাজ ও শিল্পীর সম্পর্ক নিয়ে।শীতের সন্ধ্যায় তমলুকের সাংস্কৃতিক আঙিনা ফের একবার সরগরম হয়ে উঠল নাটকের উষ্ণতায়…
তমলুক ,কাজল মাইতি,দেশ মানুষ : তমলুকে মঞ্চস্থ হল চাকদহ নাট্য জনের 'জগাখিচুড়ি টু'; নাট্যশিল্পী সরব হলেন বর্তমান সমাজ ও শিল্পীর সম্পর্ক নিয়ে।
শীতের সন্ধ্যায় তমলুকের সাংস্কৃতিক আঙিনা ফের একবার সরগরম হয়ে উঠল নাটকের উষ্ণতায়। রবিবার সন্ধ্যায় তমলুক হ্যামিল্টন ৯০' গ্রুপের সহযোগিতায় তমলুক সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনে মঞ্চস্থ হল চাকদহ নাট্য জনের নতুন প্রযোজনা, 'জগাখিচুড়ি টু'। হাজারখানেক দর্শকের উপস্থিতিতে জমে ওঠা এই নাট্য সন্ধ্যার প্রধান আকর্ষণ ছিল নির্দেশক ও অভিজ্ঞ নাট্য ব্যক্তিত্ব প্রদীপ ভট্টাচার্য-র সুচারু অভিনয় । নাটক মঞ্চস্থ করতে এসে তিনি তীব্র ভাষায় বর্তমান সমাজের 'নির্বাক' পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্য সরাসরি ছুঁয়ে গেলেন বাংলার অতীতের গৌরব আর বর্তমানের দৈন্যতাকে। তাঁর কথায়, "এই বাংলা ভারতবর্ষে রেনেসাঁ তৈরি করেছিল। তার ফসল চৈতন্য দেব থেকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে আর কতগুলো নোবেল এনেছিল এই বাংলা। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আজকে কোন পরিস্থিতিতে বাস করছি এটা ভাববেন না?"
নাটক যে কেবল বিনোদন নয়, সচেতনতার হাতিয়ার—এই প্রসঙ্গে তিনি অতীতের উদাহরণ টেনে বলেন, "নাটক দিয়ে সচেতনতা তখনও হয়েছিল আজও তৈরি হচ্ছে।" কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁর আক্ষেপ স্পষ্ট: "আজকে বরং সব হচ্ছে না, প্রযোজনা হচ্ছে, কিন্তু আসল কথাটা হচ্ছে না। আসল কাজটা হলো শিল্পীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপন। এইটাই হচ্ছে না। এটাই কেটে যাচ্ছে।"
"পারফরম্যান্স দেখে বাড়ি চলে যাচ্ছেন, ঘুমিয়ে পড়ছেন। প্রশ্ন জাগছে না।" এই 'নির্বিকার' সমাজের প্রতি এক স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রদীপবাবু জানালেন, "এই কথাটা আমরা খুব স্পষ্টভাবে, তীব্রভাবে বলবার চেষ্টা করছি বা করে যাচ্ছি। যার জন্য আমরা রোষানলেও আছি।"
'জগাখিচুড়ি টু'-এর মঞ্চে চেনা সমাজের প্রতিচ্ছবি
এদিন শীতের আমেজকে সঙ্গী করে নাট্যপ্রেমীরা ভিড় জমিয়েছিলেন সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনে। নির্দেশনার গুরু দায়িত্ব সামলেছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য স্বয়ং। নাট্যকার হিমাদ্রি শেখর দে'র সুলেখনির মাধ্যমে এই নাটকে উঠে এসেছে বর্তমান সমাজের এক অতি চেনা, অথচ অসাধারণ ভঙ্গিমায় তুলে ধরা চিত্রনাট্য।
'জগাখিচুড়ি টু' নাটকের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি, দৈনন্দিন জীবনের হাস্যকর ভুল বোঝাবুঝি এবং সাধারণ মানুষের সরলতাকে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে এক কৌতুকপ্রদ কাহিনি। যা একই সঙ্গে দর্শকদের হাসিয়েছে এবং গভীর ভাবনায় ডুব দিয়েছে। সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক অত্যন্ত সরস ও মজাদার ভঙ্গিমায় তুলে ধরায় দর্শক মহলে নাটকটি প্রশংসিত হয়েছে।
সব মিলিয়ে, প্রদীপ ভট্টাচার্যের সাহসী উচ্চারণ এবং চাকদহ নাট্য জনের সফল প্রযোজনায় তমলুক শহরের সংস্কৃতিপ্রেমীদের কাছে রবিবার সন্ধ্যার এই নাট্যানুষ্ঠান এক দারুণ পাওনা হয়ে রইল।

